শিক্ষিত হওয়ার প্রথম দিনটি কি আমরা শিক্ষিত মানুষের মত করে কাটাই ?

প্রকাশিত: ৯:২৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯

শিক্ষিত হওয়ার প্রথম দিনটি কি আমরা শিক্ষিত মানুষের মত করে কাটাই ?

আবু সুলতান সুবেদ:
র‌্যাগ-ডে। আসলে কি? গুগলের সাহায্যে ইতিহাস ঘেঁটে যতদূর জানা যায়, এটা আসলে গ্রিক কালচার। সপ্তম-অষ্টম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিরিট নিয়ে আসার জন্য রেগিংয়ের প্রচলন শুরু হয়। রেগ শব্দটি মূলত ইংরেজি রেগিং থেকেই এসেছে। আর ইউরোপে এর প্রচলন ঘটে অষ্টম শতকের মাঝামাঝি। ১৮২৮-১৮৪৫ সালের দিকে র‌্যাগ সপ্তাহের প্রচলন ঘটে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বিশেষ করে ছাত্র সংস্থা পাই, আলফা, বিটা, কাপ্পা এই সপ্তাহটির প্রচলন ঘটাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল।

তবে মজার ব্যাপার হলো, ইউরোপ-আমেরিকায় এর যাত্রা হলেও বর্তমানে আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশেই এর ব্যবহার সর্বাধিক। বিশেষ করে বাংলাদেশে র‌্যাগ-ডে এখন চূড়ান্ত বাজে আকার ধারণ করেছে। যদিও বলা হয় বিনোদনের অংশ হিসেবে র‌্যাগ-ডে উদযাপন করা হয়, তবে আধুনিকতার এই সময়ে তা আর শুধু বিনোদন কেন্দ্রিক থাকে না।

ঘটা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের এ বিদায়ী অনুষ্ঠান পালন করেন নাচ-গান, হাসি-তামাশা, রং মাখামাখি আর কিছু অশ্লীল লেখালেখির মাধ্যমে। সাধারণত র‌্যাগ-ডে তে একজন শিক্ষার্থী ধবধবে সাদা টি-শার্ট পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। কিছু সময় কাছের মানুষগুলোর সাথে নাচ-গান, হাসি-তামাশা, রং মাখামাখি করার পর শুরু হয় অশ্লীল লেখালেখির। এ যেন অশ্লীল লেখালেখির মহা লগ্ন। কেউ একজন লিখেছে, ‘তুই ভণ্ড, বোকাচু*, শালা মাদারচু* এছাড়াও আরও নানা অশ্লীল লেখালেখি। বিদায় বেলা বন্ধুদের এইসব লেখা টি-শার্টে না লেখিয়ে থাকার উপায় নেই! শুধু যে ছেলেদের টি-শার্টে না মেয়েরাও ছাড় পায় না এইসব লেখালেখি থাকে। এই হচ্ছে বর্তমান সময়ের র‌্যাগ-ডে পালন। কিন্তু বাস্তবে র‌্যাগ-ডে কি কোনো আনন্দের দিন, নাকি বেদনার?

র‌্যাগ-ডে দিনটিতে আনন্দ হতেই পারে তবে কেন সেটা রুচিশীলতা বা সৃজনশীলতার মধ্যে নয়? এমনটা কি হতে পারে না যে আজকে গ্র্যাজুয়েট হলাম চলো সবাই মিলে কোন বৃদ্ধাশ্রমে যাই। বৃদ্ধাদের বলি ‘আপনারা আমাদের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেন, আমি যেন আমার মা- বাবাদের যত্ন নিতে পারি, এমন যেন না হয় যে আমি আমার বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাই।

এমন কি হতে পারে না যে আজকে আমরা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের অ, আ, ক, খ শিখাই এবং তাদের বলি আমাদের টি-শার্টে তুমরা অ, আ, ক, খ লিখে দাও… এমন কি হতে পারে না?

আপনারাই বলুন র‌্যাগ-ডে তো আর এমন হতে পারে না? র‌্যাগ-ডে হচ্ছে আবেগের দিন, বন্ধুদের হারানোর দিন, শিক্ষিত হয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের দায়িত্ব নেয়ার দিন। প্রিয় প্রতিষ্ঠান, প্রিয় বন্ধুদের আর দেখতে না পারার দিন। তাই আসুন শিক্ষিত হওয়ার প্রথম দিনটি আমরা শিক্ষিত মানুষের মত করে কাটাই।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল