২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২০
সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বনের ভিতরে বন্যপ্রাণী আইন লঙ্গন করে উচ্চ আওয়াজে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে বনভোজনের নামে নাচ-গানের আয়োজন করা হয়েছে। রাতে অবস্থান করে বনের মধ্যে অগ্নি প্রজ্জলন করে বিয়ে বাড়ির মত রান্নারও আয়োজন করা হয়েছিল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যনমশ আয়োজনের প্রায় দেড় শতাধিক লোকের উচ্ছিষ্ট খাবার, টিস্যু পেপার, প্লাস্টিকের পানির বোতল, পত্রিকার কাগজ ফেলে ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে যায়। ফলে এ ময়লা আবর্জনায় দূষিত করে রাখে বনের বিশ্রামাগারের আশপাশ এলাকা। গত বুধবার সকাল থেকে লাউয়াছড়া উদ্যানের মধ্যবর্তী বন বিশ্রামাগারের বাংলো এলাকায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা বনভোজন ও সম্মিলনীর নামে এ আয়োজন করেছিলেন। তাদের সাথে এ আয়োজনে সামিল হয়েছিলেন নারী-পুরুষ মিলে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার কিছু গন্যমান্য ব্যক্তিরাও। বৃহস্পতিবার বিকালেও উদ্যানের বন বিশ্রামাগার এলাকা ঘুরে দেখা যায় ময়লার স্তুপ। যা পরিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছেন কয়েকজন শ্রমিক। এ সময় পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ছানাই মিয়া জানান, ময়লা করে গেছে ওরা আর সারাদিন ব্যয় করে পরিষ্কার করতে হচ্ছে তাদের। এ সময় বন বিশ্রামাগারের নিচে দোকানদাররা ও লাউয়াছড়া প্রবেশ কাউন্টারের টিকিট মাষ্টার শাহীন মিয়া বলেন, এখানে এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। পশুপাখির অসুবিধার পাশাপাশি বনের নিস্তব্দ শব্দ ও পশুপাখির কলকাকলীর পরিবর্তে তাদেরকে শুনতে হয়েছে উচ্চ শব্দের গান-বাজনা।
লাউয়াছড়া বন বিশ্রামাগারের তদারককারী গার্ড মোহাম্মদ আলী জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ আলী একটি পিক-আপে করে মালামালসহ ৪ জন রন্ধণ শিল্পী নিয়ে বনের মধ্যে প্রবেশ করেন। এসময় তিনি জানিয়েছিলেন রাতে এই রন্ধন শিল্পীরা বনে অবস্থান করে রান্নাবান্না করবেন। বুধবার সকাল থেকে দেড় শতাধিক লোক এখানে এসে অবস্থান করে খাওয়া দাওয়া করবে। এ বনের মধ্যে রান্নাবান্না করা যাবে না বলে জানালেও তিনি বলেছিলেন বন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া আছে। বনের মধ্যে আগুন জ্বালানো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হলেও রাত থেকেই খোলা আকাশেরর নিচে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রমের এলাকায় শুরু হয় রান্নার কাজ। পরদিনই বুধবার সকাল থেকে সাংবাদিক ও আমন্ত্রিত অতিথি মিলিয়ে দেড় শতাধিক লোকসহ সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে উচ্চ শব্দে নাচ গান শুরু করে। এতে অংশ নিয়েছিলেন নিজেদের পরিবেশবাদী সাংবাদিক দাবি করেন এমন বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও। বনের গার্ড আরও জানান, তিনি এখানে দীর্ঘ দিন ধরে কর্মরত আছেন এ রকম আইন বহির্ভূত কাজ কেউ আগে করেনি। এ আইন বহির্ভূত কাজে আপত্তি করায় আয়াজনকারীরা তাকে ধমকিয়েছেন। লাউয়াছড়া বনের ভিতর বনভোজনে অংশগ্রহনকারী অনেকেই বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যায়, লাউয়াছড়া বন বিশ্রামাগারের সামনে উচ্চ আওয়াজের গানের সাথে নারী পুরুষরা মিলে নাচানাচি করছেন। আর এখানে উপস্থিত ছিলেন বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে পুরষ্কারপ্রাপ্ত ও সম্প্রতি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য নিয়ে সংবাদের জন্য পুরষ্কারপ্রাপ্ত দুজন সাংবাদিক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আনেন্দালন (বাপা) বিভাগীয় সম্পাদক আব্দুল করিম বলেন, সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ স্থানে আইন লঙ্গন করে গণমাধ্যম কর্মীরা এ আয়োজন করেছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই। আর বনবিভাগ কিভাবে তাদের বন্যপ্রানী অভয়াশ্রম এলাকায় তাদের বনভোজন ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে নাচগানের অনুমতি দিল? তা খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি আরও বলেন, অন্যায় করে আবার ফেইসবুকে ছবি পোষ্ট করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী আইন লঙ্গন করে লাউযাছড়া বনে রাতে আগুন জ্বালিয়ে রান্নাবান্না, পরদিন সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে উচ্চ শব্দে নাচগান ও বনভোজন করার শুক্রবার সকালে খোঁজ করে আয়োজকদের অন্যতম শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ আলীকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মুঠোফোনে (০১৭১৮৬০১৪৪৭) সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ আলীকে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের এক সদস্য বলেন, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের উদ্যোগে এ বনভোজন ও সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল। বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রমে এভাবে উচ্চ শব্দে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার, নাচগান ও খাওয়া দাওয়া ঠিক নয় স্বীকার করে বলেন এটি একদিন সকালের আয়োজন ছিল মাত্র। সহকারী বন সংরক্ষক আনিছুর রহমান জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষন আইন ২০১২ এর বিধান অনুযায়ী বনের ভিতরে অনাধিকার প্রবেশ, গাছকাটা, বনে আগুন জ্বালানো, মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম বাজানো দন্ডনীয় অপরাধ। তবে বুধবারের বিষয়টি তার জানা নেই। যদি কেউ এরকম করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম আব্দুল ওয়াদুদ শুক্রবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন বলেছিলেন বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে এসে কয়েকজন সাংবাদিক লাউয়াছড়া বনে আসবেন। এখানে ঘুরাঘুরি করে পরে খাওয়া দাওয়া করে চলে যাবেন। তাই তাদের প্রবেশের মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তারা যে এ বনে নিষিদ্ধ এলাকায় এভাবে রান্নাবান্না, সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে নাচ-গানের আয়োজন করবে তা জানা ছিল না। তারা যা করেছে তা সম্পূর্ণরূপে অন্যায় করেছে।
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D