২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:২৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২০
শরীফ আহমেদ, মৌলভীবাজার:
জেলার কুলাউড়ার ঐতিহ্যবাহী জালালিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সাথে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সুপারের নানা অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের পথে। তাদের কারণেই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষকবৃন্দ ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মাস খানেক সময় ধরে মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুস শহীদ জেলহাজতে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা (স্থগিত) কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রউফ ও সুপার আব্দুস শহীদের পছন্দের শিক্ষক আব্দুস সামাদ মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের চাবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহকারি সুপারকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। প্রশাসনিক কাজে মাদ্রাসার অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশংসাপত্র নেওয়া সহ দাপ্তরিক কাজের জন্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
তাছাড়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি মেয়াদউত্তীর্ণ হলেও স্থগিত কমিটির সভাপতির কারণে নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে দুর্নীতির কবল থেকে মাদ্রাসাকে রক্ষা করতে এডহক কমিটি গঠন ও ভারপ্রাপ্ত সুপাররের দায়িত্ব দেয়ার জন্য ২২ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকার ৩০ জন ব্যক্তির স্বাক্ষর সম্বলিত একটি লিখিত আবেদন করা হয়। যার অনুলিপি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্টারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া একই তারিখে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বের জন্য ইউএনও বরাবরে মাদ্রাসার ১০ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর সম্বলিত আরেকটি আবেদন করা হয়। আবেদনে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এডহক কমিটি গঠন এবং বর্তমান সহকারি সুপার মাওলানা মুজিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।
মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসারের ওপর অনাস্থা এনে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে দুই অভিভাবক আব্দুল হান্নান ও মখলিছ মিয়া গত বছরের ১৪ জুলাই হাইকোর্টে একটি পিটিশন (নং-৮৭৩০) করেন। এদিকে অভিভাবক মো. আব্দুল হান্নানের ছেলে মোস্তাফিজ হোসেন রাহিম নামে শিক্ষার্থী কুলাউড়ার কামারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র বলে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্রে জানা গেছে। কিন্তুু সেই রাহিমকে জালালীয়া মাদ্রাসার ছাত্র দেখিয়ে তার পিতাকে দিয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি ২০১৯ সালের ১৩ আগস্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। বিধি মোতাবেক নতুন কমিটি গঠনে প্রশাসনের কোন আদেশ কার্যকর হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার একাধিকবার মাদ্রাসা সুপারকে পত্র ইস্যুর মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি গঠনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও মাদ্রাসা সুপার তাতে কর্ণপাত করেননি।
মাদ্রাসার স্থগিত কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রউফ জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও কুলাউড়া ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার দাপট খাঁটিয়ে সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সুপার শহীদকে দিয়েই মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন।
তিনি একতরফাভাবে কয়েক মেয়াদে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মাদ্রাসার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট গঠিত কমিটির প্রথম সভায় যে ৮ জন অভিভাবক সদস্যদের উপস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে তারমধ্যে অনেকেই জানেন না তারা এই কমিটির সদস্য আছেন কি না। ওই মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য বাবুল মিয়া জানান, ২০১৭ সালে আমাকে সদস্য করা হয়েছে বলে জানানো হয় কিন্তুু এরপর মাদ্রাসা কমিটির কোন সভায় একদিনও আমাকে ডাকা হয়নি। সভায় আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। আরেক অভিভাবক সদস্য লিলা বেগম বলেন, একদিন কমিটিতে রাখার জন্য নাম নিলেও কোন সভায় আমাকে দাওয়াত করা হয়নি। আমি সদস্য আছি কি না তা জানি না।
মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা (স্থগিত) কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রউফ জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমানে নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে মাদ্রাসার কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম থাকলে সেখানে আইন আছে। মাদ্রাসায় কোন অনিয়ম হয়নি আর সুপার জেলহাজতে থাকলেও একসময় নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।
প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর জন্য মানুষ ঠিক করে দিয়েছি। এক স্কুলের ছাত্রকে মাদ্রাসায় ভর্তি দেখিয়ে তাঁর পিতাকে দিয়ে হাইকোর্টে পিটিশন কিভাবে করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, একজনের পক্ষে আরেকজন পিটিশন করতেই পারে। একটি মহল এসব ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সুপারের অসহযোগিতার কারণে কমিটি গঠনে কার্যত পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। আর ভারপ্রাপ্ত সুপারের বিষয়ে ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশনা দিবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, মাদ্রাসায় কমিটি না থাকায় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের কোন নির্দেশনা পাইনি। শুধু আমার স্বাক্ষরে পরিপত্রের আলোকে শিক্ষকদের বেতন দেয়া হচ্ছে। আর নির্বাচন বিষয়ে মহামান্য আদালতের নির্দেশনা পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের কর্তৃক ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত। ( শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের দুইটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক সিলেটের দিনকাল ও সিলনিউজবিডি ডট কম)
office: Anamika-34. Purbo Shahi Eidgah, Sylhet 3100.
ইমেইল : pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Facebook
মোবাইল: +8801712540420
Design and developed by M-W-D