নাট্য-সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মানবিক বাংলাদেশের কথা বলা হয়: জেলা প্রশাসক

প্রকাশিত: ৩:১০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০

নাট্য-সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মানবিক বাংলাদেশের কথা বলা হয়: জেলা প্রশাসক

সিলেটের দিনকাল ডেস্ক:
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, মানুষকে জাগ্রত করতে এবং সমাজকে সচেতন করতে প্রয়োজন মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার। তিনি বলেন, একটি মানবিক বাংলাদেশের জন্য নাট্য ও সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। নাটকের মধ্য দিয়ে অতি সহজেই মানুষের কাছে সমাজ জীবনের চিত্র ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলী তুলে ধরা সম্ভব। তিনি নাট্য পরিষদের একুশের আলোকে নাট্য প্রদর্শনীর প্রশংসা করে বলেন, এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে এখানকার নাটকের দর্শকরা যেমন ভাল কিছু নাটক উপভোগ করেছেন তেমনই নাট্যকর্মীদের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করেছে।

‘একুশে মিছিল, একুশে হাঁটা, একুশ মানে না পথের কাঁটা’ এই স্লোগানে মহান ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে সিলেটের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট একুশের আলোকে নাট্য প্রদর্শনীর ১৭ দিনব্যাপী আয়োজনের সমাপনী দিন সোমবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

সমাপনী দিন সোমবার ছিল নান্দিক নাট্যদলের নাটক ‘বাসন’। এটি রচনা করেছেন সেলিম আল দীন, পুন:নির্দেশনা দিয়েছেন উজ্জল দাস। সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্তের পরিচালনায় নাটক শেষে সমাপনী আয়োজনে উৎসব স্মারকের মোড়ক উন্মোচন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক।

এসময় উপস্থিত ছিলেন নর্থ ইষ্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য্য প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলী, মদনমোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক সর্বানী অর্জুন, নাট্যজন সুনির্মল কুমার দেব মিন, নাট্য পরিষদের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন, পরিচালক চম্পক সরকার, সহ-সভাপতি উজ্জল দাস, যুগ্ম সম্পাদক সুপ্রিয় দেব শান্ত, কোষাধ্যক্ষ ইন্দ্রানি সেন শম্পা, প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক অচিন্ত কুমার দে, নির্বাহী সদস্য দিবাকর সরকার ও ফারজানা সুমি।

জেলা প্রশাসক নাট্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী নাট্যদলের প্রতিটি নাটকের নির্দেশককে উত্তরীয় তুলে দেন। নাট্য প্রদর্শনী শেষে নাট্যদলকে স্মারক ও ফুলের শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়। হলভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে শেষ হয় সমাপনী দিনের নাটক। নাটকে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের প্রথম দিকের রচিত নাটক ‘বাসন’। বাসন’ নাটকের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় একটি বাসন হয়ে ওঠে পরিবার ও গ্রামের ঐতিহ্যের স্মারক। দিনের পর দিন পরিবারের সদস্যরা তাদের ভালবাসায় রক্ষা করে বাসনটিকে। পরদাদা, দাদা, বাবা, সন্তান এই চার বংশ পরম্পরায় ব্যবহৃত বাসনটি পরিবারের নানা গৌরবময় সাক্ষ্যবহন করে।

বাসনটি উত্তর প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই বাসনে খাবার খেতেন ছদুরুদ্দীন। যিনি ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন বীরযোদ্ধা। একদিন শুহুরে একজন রাজনীতিবিদ গ্রামে এসে তার ক্ষমতাবলে আয়ত্ত করতে চায় বাসনটি। নানা দ্বন্দ্ব সংঘাতের ঘটনাপ্রবাহে পরিবারের এক সদস্য আত্মাহুতি মাধ্যমে হলেও বাসনটিকে রক্ষা করে।বর্তমান সময়েও নানা ঐতিহাসিক নিদর্শনও ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক থাবায় আক্রান্ত। কিন্তু চাইলেই কি সব করায়ত্ব করা যায়? যেখানে মানুষের আবেগ মিশে থাকে সেটি শেষ পর্যন্ত রক্ষা করে সাধারণ মানুষ। এই বিষয়টিই নাটকে তুলে ধরা হয়েছে।

নাটকে অভিনয় করেন উজ্জ্বল দাস, কনোজ চক্রবর্তী, মাধব কর্মকার, ইমরান খান, ফখরুল আহমদ, পরাগ রেণু দেব, অমিত ত্রিবেদী, আরিফুল ইসলাম, হিমাংশু হিমু, হিল্লোল শর্মা, পান্না ভট্টাচার্য, শিমুল, পার্থ প্রতিম রায়। ১৭দিন ব্যাপী এই নাট্য প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে সিলেটের ১৬টি নাট্যদল। নাট্যপ্রদর্শনী উপলক্ষ্যে সিলেট কবি নজরুল অডিটোরিয়াম চত্ত্বরে প্রতিদিন সিলেটের নাট্যমোদী দর্শকের উপস্থিতি ও উৎসাহ এ যাবত কালের সর্ববৃহৎ নাট্যপ্রদর্শনীকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। ১৭ দিনব্যাপী নাট্য প্রদর্শনীতে সহযোগিতা করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ, সিলেট।

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট’র আয়োজনে নাট্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান পরিচালক হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য্যরে স্মারকগ্রন্থ ‘অনির্বাণ’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে নাট্য পরিষদের পক্ষ থেকে সকলের উপস্থিতি কামনা করা হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল