শ্রীমঙ্গল বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক

প্রকাশিত: ১:৪৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০

শ্রীমঙ্গল বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সদ্য ঘোষিত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও পৌর আহবায়ক কমিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেছেন, কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীর নাম নেই। অনেকে আবার বলেছেন এই কমিটির বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।

জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান স্বাক্ষরিত কমিটিকে সাধারণ সম্পাদক সাবেক মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মিজানের স্বাক্ষর না থাকায় কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক নেতাকর্মী।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির মো. মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুককে আহবায়ক ও নূরে আলম সিদ্দিকীকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা করে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি।

তবে ২৩ ফেব্রুয়ারি কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম নাসের রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক বকশী মিছবাহ উর রহমান স্বাক্ষরিত ওই আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।

এছাড়া একইভাবে শ্রীমঙ্গল পৌর বিএনপির জয়নাল চৌধুরীকে আহবায়ক ও মো. মোছাব্বির আলী মুন্নাকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমান মিজান জানান, এই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। এনিয়ে দলীয় ফোরামে কোন সভাও আহবান করা হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই কমিটির কথা জেনেছি। তিনি বলেন, এরপরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের বাড়িতে ৪/৫ জন মিলে বসে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী বাদ পড়েছেন।

ভিপি মিজান বলেন, আমরা মনে করি এটা দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি। এজন্য তিনি কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বলে জানান।

শ্রীমঙ্গল পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি সরফরাজ আলী বাবুল নতুন কমিটির বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় জানান, খেয়াল খুশিমত এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হয়নি। এর ফলে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী বাদ পড়েছে।

আলোচিত উপজেলা বিএনপির সদ্য আহবায়ক কমিটির সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ৩১ সদস্য বিশিষ্ট স্বল্প পরিসরে কমিটি গঠন করায় অনেক নেতাকর্মী বাদ পড়তে পারেন।

সদ্য ঘোষিত এই কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়া মধু বলেন, শুনলাম আমাকে কমিটিতে সদস্য পদে রাখা হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।

পরে কমিটির তালিকায় দেখা যায় সেখানে ‘সোনা মুজিব’ এর স্মাগলিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের স্থান দেয়া হয়েছে। কমিটির স্থান পাওয়া অনেকে ব্যক্তি সোনা মুজিবের আদর্শে বিশ্বাসী, বিএনপির নয়।

তিনি বলেন, কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে- শ্রীমঙ্গলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার মতো তাদের উল্লেখযোগ্য সামাজিক অবস্থান ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তাদের নেই।

সদ্য ঘোষিত কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য হাজি মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজি মুজিব) বলেন, ‘এই কমিটি আমি দেই নাই, এম নাসের রহমান সুন্দর একটি কমিটি দিয়েছেন। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোন লোক নেই, কমিটিতে বিএনপির নিবেদিত ব্যক্তিরাই আছেন।

যারা মামলা, হয়রানির শিকার হয়েছেন তারাই আছেন কমিটিতে। যারা বাদ পড়েছে তারা বিএনপির কেউ নয়, তারা বিএনপি নামধারী আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট।

কমিটিতে স্মাগলিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের স্থান দেয়া হয়েছে- পৌর মেয়রের এমন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি (পৌর মেয়র) বিগত নির্বাচনে নিস্ক্রীয় ছিলেন। তিনি বিএনপির কেউ নন। তিনি যে বিএনপি করেন তার কোন প্রমান নেই।

নতুন উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াকুব আলী সম্পর্কে হাজি মুজিব বলেন, তদবির করে ইয়াকুব আলী তার নাম ঢুকিয়েছেন।

হাজী মুজিব স্বীকার করেন, বিগত নির্বাচনে ধানের শীষের বিরুদ্ধে কাজ করেছে-গ্রুপিং মেটানোর স্বার্থে এমন ব্যক্তিদেরও কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমানকে সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর ছাড়া কমিটি গঠন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদক না থাকলে তার অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিক সম্পাদক স্বাক্ষর করতে পারেন।

গঠনতন্ত্রে এটা বলা আছে। সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আপনি তার সাথে যোগাযোগ করেননি-এমন প্রশ্নের জবাবে এম নাসের বলেন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় তাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে, তিনি আসেননি।

পরে সম্মান দেখাতে লোক পাঠিয়েছি কিন্তু তিনি আসেননি। সভাপতি হিসেবে ১৭ বছর স্বাক্ষর দিয়ে কমিটি করেছি। সেক্রেটারি তো প্রস্তাব করবে, অনুমোদন দেবে সভাপতি- এখন নতুন নিয়ম দেখানো হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত নই। আর এমন তো হওয়ার কথাও নয়। গঠনতন্ত্র মোতাবেক কমিটি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, খোঁজ খবর না নিয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।