ক্ষুুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ ব্যাপক সহায়তায় : ৩ দিনে পৌছে গেল ক্ষুধার্থদের খাবার

প্রকাশিত: ৫:৩৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০২০

ক্ষুুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ ব্যাপক সহায়তায় : ৩ দিনে পৌছে গেল ক্ষুধার্থদের খাবার

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধকালে কমলগঞ্জ উপজেলায় দোকানপাট বন্ধ, মানুষ সমাগম বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগের মাঝে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিন মজুর ও অসহায় মানুষজন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কমলগঞ্জে একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে মাত্র ৫০০ প্যাকেট খাবার আসে। ফলে প্রতি ইউনিয়নে বরাদ্ধ দেওয়া হয় মাত্র ৫০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী। ব্যাপক চাহিদার মাঝে খাদ্য সহায়তা ছিল অপ্রতুল। এ অবস্থায় ব্যক্তি ও সংগঠনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগে ব্যাপক সহায়তা পাচ্ছেন বাড়ি ঘরে আটকাপড়া অসহায় মানুষজন। এসব ক্ষুদ্র উদ্যোগ ব্যাপক সহায়তা হিসেবে কাজ করছে।
এ দিকে তিন দিন ধরে একটি অসহায় পরিবার ক্ষুধার্থ এমন একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেখে ওবায়দুর রহমান ও কবির শেখ নামে দুই তরুণ দ্রুত চাল, ডাল, তেল ও পেঁয়াজ সমন্বয়ে এক প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী নিয়ে পৌছে গেলে অসহায় পরিবারের বাড়িতে। বুধবার (১ এপ্রিল) সকালে এই সহায়তা দেওয়া হয় শমশেরনগর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে বিধাব স্বপ্না বেগমের বাড়িতে।
জানা যায়, কমলগঞ্জে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত দুঃস্থ ও অতিদরিদ্র জনসাধারনের ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে বিতরণের জন্য ৫০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে প্রতি ইউনিয়নে মাত্র ৫০ প্যাকেট করে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির নিকট এসব খাদ্য সামগ্রী হস্তান্তর করা হলে জনপ্রতিনিধিরা প্রতি ইউনিয়নে ৫০ জন করে হত দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেন। এ সহায়তা চিল চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এই ব্যাপহ চাহিদার মাঝে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পৌর এলাকার বড়গাছ ও ভানুগাছ বাজার শীলপাড়ায় অসহায় ও দুস্থ ১০০ পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকাল ১১টায় পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের বড়গাছ (আংশিক) ও ৬নং ওয়ার্ডের শীলপাড়া (আংশিক) এলাকায় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চাল,ডাল, পিয়াজ, লবণ,তেল, সাবান ইত্যাদির সমন্বয়ে প্যাকেট করে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ বিতরণ করেন। কমলগঞ্জ উপজেলা সদরে আফরোজ উদ্দীন ট্রাস্ট থেকে ৫০টি পরিবারে খাদ্য দ্রব্য বিতরণ করা হয়। আসিফ নিয়াজ (রনি) ৫০টি পরিবারে, মাইদুল হাসান রিপন শতাধিক পরিবারে ও মাসুম আহমেদ ৫০টি পরিবারে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। শমশেরনগর ইউনিয়নে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের পক্ষে বাড়ি ঘরে আটকা পড়া অষহায় ৫০টি পরিবারে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। সাংবাদিক আলমগীর হোসেন ৫০টি অসহায় পরিবারের কাছে মঙ্গলবার রাতে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেন। মাধবপুর ইউনিয়নে স্থানীয় সংবাদকর্মী আসহাবুর ইসলাম নিজ উদ্যোগে বেশ কয়েকটি পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেন। আদমপুর ইউনিয়নে ব্যবসায়ী আব্দুল আহাদ (ফারুক) নিজ বাড়ি থেকে ২৫০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। স্থানীয় সংবাদকর্মী সাব্বির এলাহী, বাবু মিয়া ও সাদেক মিয়া মিলে ২৫ পরিবারেরমাঝে রাতে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেন। অন্যদিকে আদমপুরের হানিফুর রহমান বেলাল নামে এক দুগ্ধ ব্যবসায়ী তার এলাকার ৩ হাজার পরিবারের মাঝে ১ লিটার করে দুধ বিতরণ করেন।
অন্যদিকে কমলগঞ্জ থানা ও শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌছে দেওয়া হচ্ছে। গত ২ দিন মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আশরাফুজ্জামান, কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান ও শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, প্রাথমকিভাবে এক পৌরসভা ও ৯ ইউনিয়নের জন্য ৫০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী এসেছিল। তা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আশা করেন পরবর্তীতে আরও খাদ্য সামগ্রী আসবে তখন বাকি থাকার অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করা হবে।
তবে নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক আরোও বলেন, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি কমলগঞ্জের পৌর মেয়র থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগ ও প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোগে অসহায় মানুষদের মাঝে ব্যাপক সহায়তা নিয়ে যাচ্ছেন। এ উদ্যোগ আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি মনে করেন।