স্বীকৃতির বিষয়টা যখন জোরালো ভাবে আলোচনায় আসে,এবং স্বীকৃতির পক্ষে ছাড়া জাগতে শুরু করে,
তখন আল্লামা আহমদ শফী দা.বা.ও ব্রাক্্ষণ্মবাড়িয়ার মুফাস্সির আল্লামা সিরাজুল ইসলাম রা. দ্বয়ের শক্ত বিরুধিতা সম্বলিত বক্তব্য পত্রিকায় আসে।
এবং তদানিন্তন ‘ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার’ বসুন্ধরার পরিচালক,ফক্বীহে মিল্লাত,মুফতী আব্দুর রাহমান সাহেব রাহ.জোর কণ্্ঠ ে তার প্রতিবাদ করেন।
বিভিন্ন সভা সেমিনারে,স্বীকৃতির বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেন।
সর্বশেষ তিনি ২০১২ সালে আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশের দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনে, উপস্থিত হয়ে স্বীকৃতি গ্রহণ না করার জন্য উদাত্ত আহবান জানান,এবং হাত উঠিয়ে ওয়াদা নেন। তখন স্বীকৃতির আলোচনা অনেকটা নীরব হয়ে যায়।
পরবর্তীতে আলহাইয়্যাতুল উলিয়ার নেতৃত্বে সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি গৃহীত হয়ে যায়।
তবে স্বীকৃতির সূচনালগ্ন থেকেই স্বীকৃতির পক্ষে বিপক্ষে নানা রকমের বিবৃতি,কথা-বার্তা চলে হরদম।
তাই আমি অধম স্বীকৃতি প্রসঙ্গে, কওমী মাদ্রাসা, সরকারিকরণ বিরুধী আন্দোলনের সিপাহসালার,শায়খুল ইসলাম,আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী রা.এর খালফুর রাশীদ,পূর্ব সিলেট আযাদ দ্বীনি এদারা তা’লীম বাংলাদেশের মুহতারাম মহাসচিব,শায়খ ও মুর্শিদ,আল্লামা আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি।
(একটি স্মারকেও তা স্থান পায়।)
উল্লেখ্যঃপূর্ব সিলোট আযাদ দ্বীনি এদারা,এ পর্যন্ত স্বীকৃতি গ্রহণ করে নাই।
সাঈদঃ
আস্সালাইমু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।হুজুর!কেমন আছেন?
আল্লামা দুর্লভপুরীঃ
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।আল-হামদুলিল্লাহ! ভালো আছি।
সাঈদঃ
হুজুর আপনার হাতে সময় থাকলে,এবং বিরক্তিবোধ না করলে,কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই।
আল্লামা দুর্লভপুরীঃ হাঁ সময় আছে বলো।
সাঈদঃ
কওমী মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে, আপনার মতাম জানতে চাই।
আল্লামা দুর্লভপুরীঃ
এখানে প্রথমে কওমী মাদ্রাসার সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য, এবং দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বুঝা দরকার।
(এক)কওমী মাদ্রাসার সংজ্ঞা হলো,কওম অর্থ্যাৎ, মুসলিম জনসাধারণের অর্থায়ন, নিয়ন্ত্রণ, ও পরামার্শ দ্বারা যে সকল মাদ্রাসা পরিচালিত হয়।
(দুই)দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটঃ লর্ড মিকালে যখন উদ্যোগ নিল,আমরা হিন্দুস্তানে এমন এক সম্প্রদায় তৈরী করব,যারা আমাদের এবং হিন্দুস্তানীদের মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করবে।এই সম্প্রদায় এমন হবে,যারা রঙ্গে- রুপে ও বংশ পরিচিতিতে হিন্দুস্তানী হলেও,জ্ঞান- গরিমা,চরিত্র ও চাল-চলনে এবং বিচক্ষণতায় প্রকৃত ইংরেজ হবে।
পক্ষান্তরে তাদের এই ঘৃণীত উদ্দেশ্য প্রতিরোধে,নানুতবী রা.বলেন,আমাদের শিক্ষা ও সভ্যতার উদ্দেশ্য,এমন একদল মানুষ তৈরী করা,যারা রঙ্গে-রুপে ও বংশ পরিচিতিতে হিন্দুস্তানী হলেও পক্ষান্তরে মনে-মস্তিষ্কে প্রকৃত মুসলিম হবে।
(তিন) উদ্দেশ্য হলো,ইসলাম ধর্মের তথা কোরআন-হাদীসের বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষা দ্বারা একজন শিক্ষার্থীকে নাইবে নবী অর্থাৎ ওয়ারাছাতে নবুয়্যাতের সঠিক উত্তরাধিকারী হিসাবে গড়ে তোলা।আর এই ধারার পরিপূর্ণ শিক্ষা হলো উম্মাতে মুসলিমার উপর ফরযে কেফায়া।
এখন কথা হলো,কোন দেশের সরকার ব্যবস্থায়, ইসলামী খেলাফত ভিত্তিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে,সে দেশের কওমী মাদ্রসার সনদের নতুন করে স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না।কারন ইসলামী সরকারের উপর কোরআন-হাদীসের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করা ওয়াজিব।সুতরাং এই দায়িত্ব সরকার নিজেই করতে বাধ্য।
আর যে দেশের সরকার ব্যবস্থায় ইসলামী শাসন ব্যবস্থা অনুপস্থিত,সেখানে মুসলিম জনসাধারনের উপর কোরআন-হাদীসের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করা ওয়াজিব।
কাজেই এই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে,ইসলামী শাসনব্যবস্থা অনুপস্থিত থাকায় মুসলিম জনসাধারণ তাদের এই সুমহান দায়িত্ব পালন করে আসছে।
বিশ্বব্যাপী কওমী মাদ্রাসা সমূহকে, মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে নিয়ে,
অনৈসলামিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার একটা সম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র চলছে।আমি যতঠুকু জানি,আমাদের দেওবন্দের আকাবির হযরাতগণ এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক।
এ প্রসঙ্গে আমি মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত ইসলামী চিন্তাবিদ,আল্লামা তাকি উসমানী সাহেবের একটি মন্তব্য পেশ করাটাই যথেষ্ট মনে করি।
তিনি বলেন,আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ কওমী মাদ্রাসার সিলেবাসের পরিবর্তন কামনা করেন,যাতে কওমী মাদ্রাসার সনদ ইউনিভার্সিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়।অথচ কওমী সনদকে ভার্সিটি অথবা সরকার কর্তৃক অনুমোদন লাভের প্রত্যাশায় সিলেবাস পরিবর্তন,কওমী মাদ্রাসার মৌলিকতা পরিপন্থি।
তিনি বলেন,আমাদের কওমী আলেমরা যে ইলমের আমানতদার,এবং যে চিন্তা-চেতনার উত্তরাধিকার, এতে ইহা তাদের জন্য লজ্জাকর বৈ কিছু নয় যে,অন্যের কাছে নিজের যোগ্যতা উপযোক্ততার সার্টিফিকেট লাভের জন্য দরখাস্ত নিয়ে ঘুরবে।
(দ্র:দ্বীনি মাদারিস কা নেসাব ও নেজাম-পৃ:৩৬)
শুনলেন তো!
এরকম আমাদের আকাবিরদের আরো অভিমত রয়েছে।তাই আমরা স্বীকৃতি গ্রহণ করাকে এখন পর্যন্ত পছন্দ করি না।
সাঈদঃ
স্বীকৃতির কারণে কি দ্বীন বিঘ্নিত হবে?
আল্লামা দুর্লভপুরীঃ
স্বীকৃতির কারণে দ্বীন বিঘ্নীত হবে,তা নির্ধিদ্বায় বলা যায় না,তবে এ আশঙ্কাকে একবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়না।কারন বর্তমান সরকারের অতীত ইতিহাস বর্তমানের চেয়ে অনেক ভিন্ন।ভবিষ্যেতেও এ সরকারের মন মানসিকতা নিয়ে গভীর শঙ্কা রয়েছে।নদীর পানি গড়িয়ে বেলা বাড়ার সাথে নতুন করে কখন কোন সরকার আসবে?তার মন মানসিকতা কেমন হবে তাও কল্পনা করা যায়না।সুতরাং এদিকে লক্য করলে এ আশঙ্কা একবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়না।
সাঈদঃ
স্বীকৃতি প্রসঙ্গে,আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী রা. এর চিন্তাধারা কী ছিল?
আল্লামা দুর্লভপুরীঃ
শায়খুল ইসলাম মুশাহিদ বায়মপুরী রা.শুধু স্বীকৃতি নয়,বরং প্রত্যেক ঐ কাজের ঘোর বিরুদী ছিলেন,যে কাজে কওমী মাদরাসার আদর্শ,স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য ধংস হওয়ার বিন্দুমাত্র আশঙ্কা রয়েছে।গাছবাড়ি জামিউল উলুম মাদ্রাসা বিসর্জন দিয়ে, কানাইঘাট মাদ্রাসায় চলে যাওয়ার ইতিহাসই তার ঝলন্