অনলাইন ক্লাস বর্জন করলো শাবির লুব্ধক ব্যাচ

প্রকাশিত: ৭:৫২ অপরাহ্ণ, মে ৯, ২০২০

অনলাইন ক্লাস বর্জন করলো শাবির লুব্ধক ব্যাচ

শাবি প্রতিনিধি::
করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অনলাইন ক্লাস ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ‘লুব্ধক’ ব্যাচ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

এর আগে গত ৭ ও ৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশন ও ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।

শনিবার (৯ মে) বিকেলে মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের লুব্ধক ব্যাচের পক্ষ থেকে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের তানভীর, অর্থনীতি বিভাগের ইমরান, বায়োকেমিস্ট্রি এবং মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সোহান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের জাকিয়া, ইংরেজি বিভাগের নদী এবং ইইই বিভাগের নিশাত তাসনিম নিতু এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের এ ক্রান্তিকালে ‘লুব্ধক’ (২০১৫-১৬) ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সকল বিভাগের সকল অনলাইন ক্লাস বর্জনের ডাক দিচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনলাইন ক্লাস ব্যবস্থায় শিক্ষার গুণমান ডিজিটাল অ্যাকসেস ও ইন্টারনেট সংযোগ মানের ওপর নির্ভরশীল। তবে বর্তমান সময়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করছেন। এসব অঞ্চলে ইন্টারনেট অ্যাকসেসের সমান সুযোগ সুবিধা (৩জি/৪জি) না থাকায় এসব এলাকার প্রায় ৬০% শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া ক্লাস অনলাইনে নেওয়ার ফলে আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল ডিভাইস ও ডাটা প্ল্যানের ব্যয় মেটাতে না পেরে ক্লাস করতে পারছেন না। এদিকে বর্ষা-মৌসুম চলার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে অনেকে ব্রডব্যান্ড চালিয়েও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা বর্তমান সময়ে পরিবারকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করছেন যার ফলে তারা অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে সব ব্যাচে ৩০-১০০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করে থাকেন। এতজন শিক্ষার্থী একসাথে অনলাইনে ক্লাস করলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে মতামত আদান-প্রদান অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অনেক শিক্ষক আছেন যারা ক্লাস রেকর্ড আপলোড দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোন প্রশ্ন থাকলে তা করার সুযোগ থাকছে না। এছাড়াও, গাণিতিক অনেক বিষয় রয়েছে যা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সঠিকভাবে বুঝা যায় না।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনেক শিক্ষক আছেন যারা অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। তাদের জন্য হঠাৎ করে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া বড় একটি চ্যালেঞ্জ। ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর শিক্ষকদের লিখে বুঝিয়ে দেওয়ার মতো টুল থাকলেও পূর্ব প্রশিক্ষণ না থাকার দরুন অনেক শিক্ষকের পক্ষে অনলাইন ক্লাসে এসব টুল ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে তারা শুধু অনলাইন ক্লাসে বই, অথবা স্লাইড দেখে যা পড়েন, শিক্ষার্থীদের তাই শুনতে হয়। এছাড়া মহামারীতে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে। এর মাঝে আমাদের নিজেদের পরিচিত মানুষ, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরাও আছেন। প্রতিদিন এ ধরনের খবর আমাদেরকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলছে। আমরা সবাই নিজেদের ও নিজেদের পরিবারকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছি। এমন অবস্থায় অনলাইনে ক্লাস করা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও হুমকির মুখে ফেলবে বলে আমরা মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমাদের সবার জীবনের বড় একটি অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব কোর্সই আমরা চাইলে অনলাইনে করতে পারি। কিন্তু আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ চাই। এরপরও যদি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেই ক্লাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত শিক্ষা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।

সর্বোপরি ব্যাচের পক্ষ থেকে বিভাগীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সকলের সুবিধার্থে অনলাইন ক্লাস, পিডিএফ, বিভিন্ন সফট-কপি শেয়ার, রেকর্ড লেকচার এবং বিভিন্ন টিউটোরিয়াল লিংক শেয়ারসহ সকল ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল