সমাজ সেবা অধিদপ্তরের প্রদানকৃত চেক : কমলগঞ্জের চা বাগানগুলোতে তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ, দুই এনআইডিতে ৭৪টি নাম

প্রকাশিত: ৬:০০ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২০

সমাজ সেবা অধিদপ্তরের প্রদানকৃত চেক : কমলগঞ্জের চা বাগানগুলোতে তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ, দুই এনআইডিতে ৭৪টি নাম

সালাহ্উদ্দিন শুভ,কমলগঞ্জ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আতওয়ায় সম্প্রতি ২২টি চা বাগানে দরিদ্র ৩ সহস্রাধিক চা শ্রমিক পরিবারের ৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
গত ৬ ও ৭ জুন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ উপাধ্যক্ষ এম এ শহীদ আনুষ্ঠানিকভাবে ২১১৩ জন শ্রমিক পরিবারের মাঝে ৫ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেছেন। সর্বশেষ গত ১৪ জুন রহিমপুর ইউনিয়নের দেওড়াছড়া ও মৃর্তিঙ্গা চা বাগানে বাকি চা শ্রমিকদের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়।
চেক বিতরণের পর শ্রমিক তালিকা খতিয়ে দেখা যায় প্রকৃত দরিদ্র চা শ্রমিক বাদ দিয়ে চা বাগান কর্মচারী, পঞ্চায়েত সদস্যদের নামসহ তালিকা প্রণয়নকালে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। শমশেরনগর ও কানিহাটি চা বাগানে দুইটি জাতীয় পরিচয় কার্ড (এনআইডির) বিপরীতে ৭৪ জন শ্রমিকের নাম রয়েছে।
শশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক তালিকা খতিয়ে দেখা যায় এনআইডি নম্বর ৫৮১৫৬৮৫-এর বিপরীতে ১১০ নম্বর তালিকাভুক্ত সত্যনারায়ণ রাজভরের নাম রয়েছে। একই এনআইডির বিপরীতে আর ৩০ জন শ্রমিকের নাম রয়েছে। কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক তালিকায় এনআইডি নং ৫৮১৫৬৮৫৯৫ নম্বরে ১নম্বর মাখন বীনের নাম রয়েছে। একই আইডিতে রয়েছে আরও ৪২ জন শ্রমিকের নাম। আর এসব তালিকা তৈরী করেন স্থানীয় ওয়ার্ড ইউপি সদস্যরা। তৈরী তালিকাগুলো যাচাই বাছাই করে গত ২ নভেম্বর ২০১৯ ইং স্বাক্ষর করেন সংম্লিষ্ট চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি, একজন চা বাগান ব্যবস্থাপক ও ইউপি চেয়ারম্যান।
শমশেরনগর, আলীনগর, কুরমাসহ বিভিন্ন চা বাগানে চা শ্রেিমকর বদলে বাগান কর্মচারীদের নাম রয়েছে তালিকায়। তাছাড়া তালিকাভুক্ত অধিকাংশ চা বাগানের নিবন্ধিত চা শ্রমিক নন। এমনকি আলীনগর চা বাগানে মৃত ব্যক্তির নামেও চেক প্রদানেরও অভিযোগ রয়েছে।
চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদানকৃত ৫ হাজার টাকার চেক প্রদানের তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ জুন শমশেরনগর, দেওড়াছড়া, মৃর্তিঙ্গা চা বাগান থেকে চা শ্রমিকরা মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকালে কমলগঞ্জের কুরমা চা বাগান থেকে চা শ্রমিক নারী নেত্রী গীতা রানী কানুর নেতৃত্বে একদল চা শ্রমিক কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগকারী নারী নেত্রী গীতা রানী কানু বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে তার অফিস সহকারী (সিএ) রাজেন কৈরীর কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছিলেন। কিছুক্ষণ পর রহস্যজনকভাবে রাজেন কৈরী প্রথমে গ্রহনকৃত অভিযোগখানি আবারও ফেরৎ দিয়ে দেন। এ নিয়ে সাময়িক ক্ষোভের সৃষ্টি হলে গীতা রানী কানু আবার মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন মহোদয়ের সাথে মোঠো ফোনে কথা বলে জেলা প্রশাসকের ই-মেইলে অভিযোগটি প্রেরণ করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তালিকা তৈরী করেন জনপ্রতিনিধিরা। সে তালিকায় প্রতি স্বাক্ষর দেন বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি, একজন ব্যবস্থাপক ও ইউপি চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে সমাজ সেবা বিভাগের করনীয় কিছু ছিল না।
কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা প্রানেশ চন্দ্র বর্মা বলেন, চেক বিতরণ করা হলেও সমাজ সেবা বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে চেকের টাকা প্রদানে এখনও কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই কেউ এখনও চেকের টাকা উত্তোলন করতে পারেনি। আর এখনও যেহেতু নানা অভিযোগ শুনা যাচ্ছে সেহেতু এসব খতিয়ে দেখা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের প্রদানকৃত চেকের তালিকার অভিযোগটি তার প্রক্রিয়ার বহির্ভূত তাই তিনি এ অভিযোগ গ্রহন করেননি। তিনি আরও বলেন, যেহেতু জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে অভিযোগ হয়েছে, তিনি অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।